আশুরা কত তারিখে ২০২৩। আশুরা কি ও এর ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আপনি যদি আশুরা কি ও এর ফজিলত, আশুরা কত তারিখে ২০২৩ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। ধৈর্য ধরে আমাদের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। নিচে আশুরা কি ও এর ফজিলত, আশুরা কত তারিখে ২০২৩,আশুরার রোজা কয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো-
মহররম আরবী বছরের প্রথম মাস। আরবী বছরের প্রথম মাস হওয়ার কারণে এ মাসের আলাদা একটি মাহাত্ম রয়েছে। যা অন্য কোন মাসের নেই। অবশ্য অন্যান্য মাসের আলাদা আলাদা মর্যাদা রয়েছে। মহররম মাসে দুনিয়ার অসংখ্য প্রধান প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। এটা এ মহররম মাসের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে এ মাসের দশ তারিখ দিনটি বারো মাসের শ্রেষ্ঠতম ও স্মরণীয় দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। মহান আল্লাহ তা'য়ালা এ মহররমের ১০ তারিখে তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি লাওহে মাহফুজ এবং যাবতীয় প্রাণীর রুহ মোবারক সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়ার সমস্ত সমুদ্র, মহাসমুদ্র এবং পাহাড় পর্বত এ মহান দিনেই সৃষ্টি করেছেন।
এ মহররম মাসে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা পবিত্র কোরআন ও হাদীসে আলোকপাত করা হয়েছে, তারমধ্যে কয়েকটি হলো: আমাদের আদি পিতা প্রথম মানব হয়রত আদম (আঃ) কে আল্লাহ পাক এ মহররমের দশ তারিখেই সৃষ্টি করেছেন, এ দিনেই তাকে বেহেশত দান করেছিলেন এবং দুনিয়াতে এ দিনেই হয়রত আদম (আঃ) এর গুনাহ মাফ করে তার সাথে হযরত হাওয়া (আঃ) এর সাথে সাক্ষাত করিয়েছিলেন।
হযরত মূসা (আঃ) এর প্রবল শত্রু মিসরের বাদশাহ ফিরাউন এ দিনে মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আক্রমণ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় ফিরাউন তার দলবলসহ নীল দরিয়ায় ডুবে মরেছিল। এছাড়াও আমাদের মহা নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্ব পুরুষ মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:) কে এ মহররমের ১০ তারিখে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন এবং এ দিনেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্সালাম তার প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ:) কে আল্লাহর হুকুমে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় কলিজার টুকরা নাতী হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) তাঁর পরিবার পরিজনসহ কারবালার ময়দানে ফোরাত নদীর তীরে শাহাদাত বরণ করেন এই দিনে।
এ মহররমের ১০ তারিখেই আল্লাহর হুকুমে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) সিঙ্গাতে ফুঁক দিবেন। সেইদিন এ পৃথিবীর সমস্ত কিছু আল্লাহর হুকুমে ধ্বংস হবে। এমন অলৌকিক ঘটনা এই মহররম মাসে সংঘটিত হয়েছে বলেই এ মাসটির বহু ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে।
আশুরার ফজিলত ও আমল
আশুরার দিনের বহু ফজীলত ও আমল রয়েছে, এ দিনের ইবাদাতের ও ফজীলতের বর্ণনা করা যে কোন ব্যক্তির পক্ষেই কষ্টসাধ্য।
“যদি কোন ব্যক্তি আশুরার রাতে সোবহে সাদেকের পূর্বক্ষণে বারো রাকআত নফল নামায আদায় করবে আলাহ পাক তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তাকে বহু ছাওয়াব দান করা হবে এবং সে ব্যক্তি বেহেশতের নেয়ামতের পূর্ণ হকদার হবে।”
এ নামায আদায় করার নিয়ম হলঃ প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে একবার আয়াতুল কুরসী ও তিনবার সূরা ইখলাস এবং নামায শেষে করে একশত বার সূরা এখলাস পাঠ করবে।
আরেকটি হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি আশুরার রাতে চার রাকাত নফল নামায আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জীবনের পঞ্চাশ বছরের সকল সগিরাহ শুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং বেহেশতে ফেরেশতাদের থাকার এলাকায় তাঁর বসবাসের জন্য নূর দ্বারা একহাজার অট্টালিকা তৈরী করে রাখবেন।"
এ নামাযের নিয়ম হল: দুই রাকআত একত্রে নিয়ত করবে এবং প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে পঞ্চাশ বার সূরা এখলাস পাঠ করবে।
আশুরা সম্পর্কে হাদিস
অন্যত্র বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে দুই দুই রাকআত করে চার রাকআত নফল নামায আদায় করবে এবং নামাযের প্রতি রাকআতে সুরা ফাতিহার সাথে সূরা যিলযাল, সূরা কাফেরুন এবং সূরা এখলাস পাঠ করবে আল্লাহ পাক হাসরের ময়দানে কঠিন বিপদের সময় তাকে বিপদ মুক্ত করবেন।"
অন্যত্র বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি আশুরার রাতে একশত রাকাত নফল নামায আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে তিনবার করে সূরা এখলাস ও নামায শেষে সত্তর বার কালেমা তামজীদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার জীবনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে নিবেন ।"
রাসূল (সাঃ) অন্যত্র বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আশুরার রাতে চার রাকআত নফল নামায আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে পাঁচশতবার করে সূরা এখলাস পাঠ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা এমন খাস রহমত নাযিল করবেন যা অনেকের জীবনেই নসিব হয়না।"
এমনি ভাবে আশুরার দিনের মরতবা এবং বৈশিষ্ট্যের কারণে এই দিনের একটি সৎকার্যের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা ঐ সৎ কাজকারীর আমলনামায় অপরিমিত ছাওয়াব লিখে দিবেন এবং তাকে বিশেষভাবে পুরস্থিত করবেন। এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আশুরার দিন একান্ত সহানুভূতির সাথে স্বীয় হাত দ্বারা কোন ইয়াতিমের মাথায় হাত বুলায়ে দেয়, মহান আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির আমল নামায় উক্ত ইয়াতিমের মাথার চুলের সমপরিমাণ নেকী লিখে দিবেন।”
আশুরা কত তারিখে ২০২৩
মহরমের ১০ তারিখ কবে ২০২৩
আশুরার নফল রোজা
মহররম মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার তারিখে নফল নামাজ আাদায়ের পাশাপাশি নফল রোজা রাখাও অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয়। এতে অনেক ফজিলতও রয়েছে। আশুরার নফল রোজা নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। নিচে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত দুটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
এক হাদীসে রাসুল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেনঃ
“যে ব্যক্তি মহররম মাসের আশুরার দিন রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাকে দশহাজার শহীদের এবং দশ হাজার হাজীর সওয়াব তার আমল নামায় দান করবেন।"
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছেঃ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা আসার পর একদিন কোন এক মজলিসে ইয়াহুদিগণকে জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা আশুরার তারিখে রোযা রাখ কেন ? ইয়াহুদিরা বলল : হে আবদুল্লাহর পুত্র। এ তারিখে আমাদের নবী মূসা (আঃ) ও বনী ইস্রাইল সম্প্রদায়কে আল্লাহ পাক ফেরাউন ও তার দলবলের হাত থেকে নিজ কুদরত দ্বারা রক্ষা করেছিলেন। তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমরা এ দিনে রোযা পালন করি। হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে তোমাদের চেয়ে আমার সম্পর্ক অনেক বেশী। এ কথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিগণকে আশুরার দিনে রোযা রাখতে আদেশ করলেন।"
আশুরার রোজা কয়টি
আশুরার নফল রোজা দুইটি।
কারন হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো একটি নফল রোজা রাখেননি, তিনি একসাথে দুটি রোজার কম করতেন না। আমরা সবাই আশুরার দুটি নফল রোজা রাখার চেষ্টা করবো। একটি মহরমের ৯ তারিখ এবং অপরটি মহরম মাসের ১০ তারিখ রাখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।