সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন।  আজকে আমি কথা বলব সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে। আমরা সবাই মধু ও কালোজিরা এই শব্দ দুটির সাথে পরিচিত এবং এদের মজার সব গুনের কথা নিশ্চই আমাদের অজানা নয়!

সকালে-খালি-পেটে-মধু-ও-কালোজিরা-খাওয়ার-উপকারিতা
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা 


সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খেলে কি হয়

আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে কালোজিরা এবং মধুর ওষধি গুনের কথা বলা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন কালোজিরা হচ্ছে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ইবনেসিনাও সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও বলেছেন। 

কালোজিরায় রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা দেহের রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোন প্রকার ছোঁয়াচে রোগও হয় না। কালোজিরা তে রয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ শর্করা, ২১ শতাংশ আমিষ এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি। তাছাড়া মধুতে রয়েছে পয়তাল্লিশ এরও বেশি খাদ্য গুণ। তবে মধুতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। চলুন জেনে আসি- 

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

# আমরা যারা ডায়াবেটিস রোগী আছি তাদের জন্য কালোজিরা ও মধু একটি যাদুকরী ঔষধ। কালোজিরা ও মধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। অনেকে আবার প্রশ্ন করে থাকেন যে, ডায়বেটিস রোগীরা কি মধু খেতে পারবে? উত্তর হচ্ছে হে। কারণ কালো জিরা ডায়বেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। 

# যারা নিম্ন রক্ত চাপের রোগী বা যাদের ব্লাড প্রেসার লো তারা সকালে কালোজিরা ও মধু খেতে পারেন। কালোজিরা নিম্ন রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে দেহকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। 

# কালোজিরা ও মধু যৌন শক্তি বৃদ্ধি ও যৌন অক্ষমতা দূর করতে সাহায্য করে। নারী-পুরুষ উভয়ই সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খেতে পারেন। প্রতিদিন খাবারের সাথে কালোজিরা খেলে পুরুষের শুক্রাণুর পরিমান বৃদ্ধি পায়।

# কালোজিরা ও মধু অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যাদের রাতে ঘুম হয়না অর্থাৎ অনিদ্রায় ভুগছেন তারা কালোজিরা ও মধু একসাথে খেতে পারেন। 

# শরীরের বিভিন্ন প্রকার ব্যাথা ও দীর্ঘ মেয়াদি মাথা ব্যাথা দূর করতে কালোজিরা অসাধারণ ভাবে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া কালোজিরা ও মধু একসাথে খেলে শরীরের বল বৃদ্ধি পায়। 

উচ্চ-রক্তচাপ-হ্রাস-করে
উচ্চ-রক্তচাপ-হ্রাস-করে


সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম


# শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, এ্যাজমা ও শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগে ভুগছেন? কালোজিরা ও মধু রোজ সকালে খালি পেটে ও বিকেলে খেলে এসব রোগ থেকে রেহাই পাবেন।

# স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে কালোজিরা ও মধু যাদুকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।  এক্ষেত্রে টানা ৪৫ দিন কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ খেতে পারেন। 

# কালোজিরা ও মধু বিভিন্ন ধরনের স্ত্রী রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। মহিলাদের ভ্রুণ ও প্রসবকালে কালোজিরা ও মধু দারুণ ভুমিকা পালন করে। প্রতিদিন ৪ বার আধা চামচ করে কালোজিরা ও মধু খেলে প্রসতি মায়ের দুধের পরিমান বৃদ্ধি পায়। 

# এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক ও বদহজম সাময়িকভাবে দূর করতে চাইলে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরার গুড়া ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। 

# শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খাওয়ালে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক ভালো কাজ করে। 

এতক্ষণ জানলাম সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন জানব এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়?

কালোজিরার যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে। কালোজিরা নিয়মিত ও পরিমিত খেতে হয়। যেকোন জিনিসই অতিরিক্ত খাওয়া বা ব্যবহার করলে অনেক সময় উপকারের চেয়ে অপকার হয়। 

গর্ভবতী মায়েরা কি কালোজিরা খেতে পারবে?

কালোজিরার তেল গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই কালোজিরা হজম করতে পারেন না। তবে আস্তে আস্তে অভ্যাস করলে ভালো। 

যারা সহজে কালোজিরা হজম করতে পারেন না তারা খাবেন না, যারা পারেন তারাই নিয়মিত পরিমিত খাবেন। গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করানো উচিত নয়।
গর্ভবতী-মায়েরা-কি-কালোজিরা-খেতে-পারবে
গর্ভবতী মায়েরা কি কালোজিরা খেতে পারবে


কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি

কালোজিরা কিনার আগে ভালো ভাবে দেখে নিবেন যে এর কোয়ালিটি কেমন। নকল বা কৃত্রিম কালোজিরার তেল কখনও খাওয়া উচিত নয়। ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই কালোজিরা বা কালোজিরার তেল সরাসরি বা প্রক্রিয়াজাত করে খেতে হবে। 

আমরা অধিকাংশই কালোজিরার তেল ব্যবহার করি এক্ষেত্রে পুরনো তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আশা করি আপনারা সবাই কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

আমরা আপনাদের যথাসম্ভব সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি তবে যদি আমাদের দ্বারা কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

FAQ:কালোজিরা সম্পর্কিত প্রায়শ জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন: কালোজিরা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটি?

উত্তরঃ কালোজিরা খাওয়ার আগে গ্রহণ করা উত্তম।

প্রশ্নঃ 100 গ্রাম কালোজিরা তেলের দাম কত?

উত্তরঃ ৭৪ টাকা। ( স্টোর ভেদে দাম ভিন্ন হতে পারে )

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url