বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ১৫ পয়েন্ট । পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ রচনা
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পঃ শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ রচনাটি সহজ ভাষায় উপস্থাপন হলো।
*বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প;
*বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্জ ও পর্যটন শিল্প;
*বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পঃ সমস্যা ও স্মভাবনা;
ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছোটে লোক থেকে লোকান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝতে চায়, জয় করতে চায় অজানাকে। তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ জয় করেছে। পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছে নতুন পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে মহানবির একটি বাণী উল্লেখযোগ্য 'জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও'। অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য, জানার জন্য সমস্ত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো বাংলাদেশেরও আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান, অসংখ্য রূপতা। পরিবর্তনশীল ষড়ঋতুর এ দেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন, "সকল দেশের রানি সে যে তামার জন্মভূমি।" বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যময় পর্যটন স্থান। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার সাথে গলা মিলিয়ে আমরাও বলতে জারি যে, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপময়ী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ও দেশ হচ্ছে বাঙালি ও বাঙালির দেশ। বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্যটন।
পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব: অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও একটি শিল্প। কথায় আছে, 'গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।' আসলে জীবনভর ভারী ভারী বইপুস্তক পড়ে যতটুকু শেখা সম্ভব তার চেয়ে বেশি সম্ভব যদি চোখে দেখা যায়। কারণ মানুষ তার জ্ঞানের শতকরা ৭০ আ চোখ নামক ইন্দ্রিয় দিয়ে গ্রহণ করে। যে নাকি আগ্রার তাজমহল কিংবা মিশরের পিরামিড বা নায়াগ্রার জলপ্রপাত চোখে দেখেনি সে বই পড়ে তার মর্মার্থ বুঝতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে মানুষ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীনত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমেই জানা যায় । অতএব দেখা যায়, পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলেছেন চির সুন্দরী, কেউ বলেছেন চিরসবুজ, কেউ বলেছেন সকল দেশের রানি, কেউবা আবার তুলনা করেছেন সোনার কাঠি, রূপার কাঠির সাথে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বাড়ো বড়ো পণ্ডিত বিভিন্ন রকম সুন্দরের ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মতো বাংলাদেশকে নিয়েও মায়াপুরীর স্বপ্ন দেখে মানুষ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ- শ্যামল স্নিগ্ধ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি হচ্ছে মাতৃত্বের মতো শান্ত স্নেহদায়ী। উগ্র, নম্র সকলকেই তা ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্থান। পাহাড়পুর, রাঙামাটি, সাগরদিঘি, ময়নামতি, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, সোনারগী, বান্দরবান, সুন্দরবন, আরও অসংখ্য পর্যটনের স্থান ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। বাংলাদেশের এক দিকে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি। যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ স্থান। তাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-
পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশে ইতিপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোনো নির্দিষ্টি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক মুগ্ধ হয়ে আসত শুধু প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হোটেল ও মোটেল করেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়ে এসব সরকারি হোটেলে অত্যন্ত কমমূল্যে সিট রিজার্ভেশন সুবিধা দিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এর প্রাথমিক কাজ।
পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং সুন্দর স্থান । এ স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন করপোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াতব্যবস্থা সহজ ও স্বল্পব্যয়ের আওতায় আনতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তৃক অপরিসীম।
উপসংহার: প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় আধুনিক পর্যটন শিল্পনগরী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- অর্ধেক সন্দরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।' তার এ মন্তব্য সম্পর্কে আমরাও বলতে পারি, প্যারিসের অর্ধেক সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় অথচ আমাদের বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় না। তা একই সাথে দৃশ্যমান ও অনুভষ্য। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সকলেই একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবে।