বাল্যবিবাহ- এর কুফল ও করণীয়তা জেনে নিন
বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজের একটি জঘন্যতম সামাজিক অপরাধ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এখনো বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এছাড়াও জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বে বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। তবে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ হওয়ার ও বেশ কিছু জটিল কারন রয়েছে তা হচ্ছে- দারিদ্র্যতা, শিক্ষার অভাব, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, লিঙ্গ বৈষম্য, সীমিত আইনি সুরক্ষা ইত্যাদি। তাছাড়া বাল্যবিবাহের ফলে দিনদিন মাতৃমৃত্যু হার বাড়ছে। চলুন বাল্যবিবাহ কি-এর কুফল ও করণীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
বাল্যবিবাহ |
বাল্যবিবাহ কি?
বিয়ের সময় বরের বয়স যদি ২১ বছরের নিচে এবং কনের বয়স ১৮ বছরের নিচে হয় তখন তাকে বাল্যবিবাহ বলা হয়।
এছাড়া বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের কম হলে অর্থাৎ বিয়েতে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে অথবা ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে থাকলে সেটাও আইনের দৃষ্টিতে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাল্যবিবাহ একটি অপরাধ
বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে তিন ধরনের বিয়ে অপরাধ বলে ধরা হয়েছে :
১. প্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কের বিবাহ।
২. অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের বিয়ে।
৩. অপ্রাপ্তবয়স্ক পাত্র-পাত্রীর অভিভাবক কর্তৃক বিয়ে নির্ধারণ বা বিয়েতে সম্মতি দান।
বাল্যবিবাহের শাস্তি
বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিবাহ একটি মেয়ের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি তার গোটা জীবন ধ্বংস করে দেয়। বাল্যবিবাহ যারা করে এবং যারা করায় তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিশেষ শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। নিচে তা দেখানো হলো-
০ "প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।”
০ “অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করিলে তিনি অনধিক ১ মাসের আটকাদেশ বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য হইবেন।”
বাল্যবিবাহ |
বাল্যবিবাহ সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতাসহ অন্যান্য ব্যক্তির শাস্তি
পিতা-মাতা, অভিভাবক অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি আইনগতভাবে বা আইনবহির্ভূতভাবে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করবার ক্ষেত্রে কোনো কাজ করলে অথবা করবার অনুমতি বা নির্দেশ প্রদান করলে অথবা স্বীয় অবহেলার কারণে বিবাহটি বন্ধ করিতে ব্যর্থ হলে সেতি হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি অনধিক ২ বৎসর ও অন্যূন ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
বাল্যবিবাহ সম্পাদনা বা পরিচালনা করবার শান্তি
কোনো ব্যক্তি বাল্যবিবাহ সম্পাদন বা পরিচালনা করলে তা হবে একটি জঘন্য অপরাধ এবং এর জন্য তিনি অনধিক ২ বৎসর ও অন্যূন ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অর্থদন্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
বাল্যবিবাহ রোধে করণীয়
০ বাল্যবিয়ে রোধে জন্মনিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বিয়ের সময় জন্য সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
০ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কিশোরী ও নারীদেরকে সচেতন করতে হবে।
০ পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
০ কাজী ও ইমামদেরকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
০ সামাজিকভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার বিশেষ করে নির্বাচিত মহিলা মেম্বারদের নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
০ ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠনকে বাল্যবিবাহ নিরোধে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে।
০ বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে সমাজের সকলকে সচেতন করতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বাল্যবিবাহ রোধে স্থানীয়ভাবে আইনি সহায়তা
০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/মহিলা ও পুরুষ মেম্বার।
০ পৌরসভার চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনার।
০ নিকটবর্তী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
০ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা।
০ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
০ জেলা প্রশাসক।
মহিলা অধিদপ্তরের আইন সহায়তা সেল, নিকটস্থ এনজিও/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যারা বাল্যবিবাহ রোধ নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে গেলে স্থানীয়ভাবে আইনি সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
জরুরি সহায়তা ফোন নাম্বার
বাল্যবিবাহের জন্য-১০৯৮
বাংলাদেশের সকল জ্রুরি ফোন নাম্বারসমূহ দেখে নিন
আশুন আমরা সবাই একসাথে বাল্যবিবাহকে না বলি। এক্ষেত্রে স্লোগান হতে পারে "বাল্যবিবাহকে না বলি দেশের নারীদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি।" তাহলে আমাদের দেশ আরও দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌছবে।