মানব কল্যাণে বিজ্ঞান।মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনাঃআসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

তোমরা যারা মানব কল্যাণে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছিলে কিন্তু ভালো কোন রচনা খুজে পাচ্ছিলে না। তাদের জন্য সহজ এবং গুছানো ভাবে আমরা মানব কল্যাণে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা নিয়ে এসেছি তাছাড়া তোমার এই রচনাটি যেসব জায়গায় ব্যবহার করতে পারবে- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা class 10,মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ছোট,মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা hsc,মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০০ শব্দ

  • মানবকল্যাণে বিজ্ঞান
  • বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
  • আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান 

ভূমিকা

মানবজীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মানুষ নিজের জীবনের প্রয়োজনে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে। জান্নুকের অভাববোধ থেকে বিশেষ জ্ঞান হিসেবে বিজ্ঞানের উদ্ভব। আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ আজে ছুটে চলেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় গতি, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দ্রুততর। বিজ্ঞান ঘুচিয়ে দিয়েছে দূর-দূরান্তরে। ব্যবধান, মানুষকে দিয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। মানুষ বিজ্ঞানের আবিষ্কার নিয়েই জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটিয়েছে।

মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান

প্রাচীনকালে মানুষ যখন প্রথম পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করে, পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালায়, তখন থেকেই শুরু হয় মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। এভাবে মানুষ প্রস্তরযুগ পার হয়ে লৌহ-তাম্র যুগের ওপর দিয়ে আজ এক নতুন যুগে এসেছে। এ যুগকে আমরা বিজ্ঞানের যুগ বলতে পারি। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই মানুষ সমগ্র পৃথিবীর ওপর বিস্তার করেছে কর্তৃত্ব। একশ বছর আগেও মানুষের দৈনন্দিন জীবন এত সুখকর ছিল না। আজ আমাদের জীবনে বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে পরম আত্মীয়।

বিজ্ঞানের বিচিত্র অবদান

মানবকল্যাণের লক্ষ্যে বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জীবনের সুখকর পরিবেশের জন্যে বিজ্ঞান দিয়েছে বিচিত্র উপহার। মানবজীবনের প্রত্যেকটি শাখা আজ বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদানে সমৃদ্ধ। কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের রয়েছে অপরিহার্য ভূমিকা। বিজ্ঞানের যে ব্যাপক আবিষ্কার আজ মানুষকে পরম বিস্ময়ে বিস্মিত করছে, তার পটভূমিকা হিসেবে মানুষের কল্যাণই প্রাধান্য পেয়েছে। বিজ্ঞানের সাধনা যেমন ক্রমাগতভাবে চলছে। তেমনি তার কল্যাণকর ফলও মানুষের জন্যে নিবেদিত হচ্ছে। মানুষের জীবনে বিজ্ঞান কল্যাণকর নিত্যসঙ্গী।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান

বাংলাদেশের প্রায় আশিভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অনেক দেরিতে হলেও বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। মানুষ আবিষ্কার করেছে ট্রাক্টরসহ নানারক কৃষিসরঞ্জাম। পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে সেচ কাজ সম্পন্ন করছে। কীটনাশকের সাহায্যে পোকামাকড় ও পঙ্গপালের হাত থেকে ফসল রক্ষা করছে। বর্তমানে ক্লোনিং পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল বীজ তৈরি করা হচ্ছে। মরুভূমির মতো উষর জায়গায়ও কৃষিকাজ সম্ভব হচ্ছে। সভ্যতার বিকাশের পেছনে আছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান। খাদ্যশস্য ছাড়াও কৃষির অন্যান্য ক্ষেত্রেও উৎপাদনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হলে আমরা বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করতে পারি।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান

যোগাযোগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ আবিষ্কার করেছে যোগাযোগের দ্রুতগামী যানবাহন। দ্রুততম গতির রেলগাড়ি, বুলেট ট্রেন, অত্যাধুনিক কনকর্ড বিমান, সুবিশাল সমুদ্র জাহাজ মানুষকে দিয়েছে দ্রুত যাতায়াতের সুযোগ। আজ মানুষ পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে টেলিফোন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। ইচ্ছেমতো কথা বলতে পারে। রেডিও, টেলিভিশন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে যেকোনো সময় সারা পৃথিবীর যাবতীয় সংবাদ জানা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আদানপ্রদান করা যাচ্ছে কম্পিউটারের তথ্যাবলি। রকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর মহাকাশে পাড়ি জমাতে পারছে মানুষ। মহাকাশ যোগাযোগে ইতোমধ্যেই চন্দ্রাভিযানে সাফল্য এসেছে। এক কথায় যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থায় বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান অপরিসীম। সবই আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভাবন। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞান আরো উন্নত ও আধুনিক করে তুলেছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে রেডিও এবং টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ। এর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে শিক্ষা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় ও গতিশীল।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান

মানবজীবনে চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। চিকিৎসা ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান ও সাফল্য বিস্ময়কর। মানবশিশু জন্মের আগেই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে জিন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা। চোখের কর্নিয়া থেকে শুরু করে যকৃতের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। আলোকতন্তু বিদ্যা ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের দেহের ভেতরের ফুসফুস, পাকস্থলী, শিরা, ধমনী ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থা যন্ত্রের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করে নির্ভুলভাবে রোগনির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে।

বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করেছে অতিকম্পনশীল শব্দ ও লেজারকে কাজে লাগিয়ে। ফলে দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থা দেখা যেমন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি মূত্রনালি এবং পিত্তকোষের পাথর চূর্ণ করার কাজেও এর সফল ব্যবহার হচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীর অন্ধত্ব প্রতিরোধে ব্যবহৃত হচ্ছে লেজার রশ্মি। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সর্বাধুনিক পর্যায়ে উপনীত করেছে। এর মাধ্যমে ছবি তুলে সহজে রোগনির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে।

আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান

আবহাওয়া প্রকৃতির অংশ এবং এটি ছিল মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিজ্ঞান তার প্রচন্ড ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে আবহাওয়ার খবরাখবর আগেই জানতে পারছে মানুষ। সপ্তাহখানেক আগেই জানতে পারছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস। ফলে রক্ষা হচ্ছে মানুষের জীবন ও সম্পদ। এছাড়াও খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের উৎস, মাটির উপাদান এবং জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে বিজ্ঞানের উদ্ভাবন কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কার সন্ধানও দিচ্ছে আবহাওয়া বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

মানবসভ্যতার উন্নতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বিজ্ঞান। মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের আশীর্বাদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু বিজ্ঞানের অপকারও কম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজ্ঞানের ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করার পর প্রায় সকলেই বিজ্ঞানের অভিশাপ সম্বন্ধে সচেতন হয়েছেন। জাপানে আণবিক বোমা বর্ষণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রমাণ দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি করছে। আমেরিকার এক বিজ্ঞানী বলেছেন, কয়েকটা পৃথিবীকে ধ্বংস করার মতো আণবিক অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। তাই আজ প্রশ্ন উঠেছে- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান উপসংহার

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সভ্যতা যেমন আজ উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেছে, তেমনি সেই সভ্যতা আজ বিজ্ঞানের অভিশাপে ধ্বংসের আশঙ্কায় আছে। তাই সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য হলো বিজ্ঞানের ইতিবাচক ব্যবহার করা। বিজ্ঞান মানুষের সামনে কোনো অন্ধকার রাখতে চায় না। বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করলেই বিজ্ঞানের আলোয় মানুষের প্রতিদিনের জীবন আলোকিত হতে পারে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url