শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বঃ আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কথা বলবো। শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম যা বলে শেষ করা যাবে না। এরকম দিন বছরে একবারই আসে। তাই আমাদের উচিত এই শবে বরাতে বেশিবেশি আমল করা এবং আমাদের করা প্রতিটি গুনাহের জন্য পানাহ চাওয়া। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জানলে। আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন সব জানতে পারবেন।
শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব
শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত (১৪ তারিখ দিবা গত রাতকে) শবে বরাত বলে। শব অর্থ- রাত, আর বরাত অর্থ-অদৃষ্ট বা ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাত অর্থ দাড়ায়- ভাগ্য রজনি। শবে বরাত বা ভাগ্য রজনি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের নিকট অতি পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এ রাতে বান্দার ভাল-মন্দ, আয়-রোজগার, হায়াত-মউত প্রভৃতি যাবতীয় বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়।
এসব কারণেই মানুষের কাছে শবে বরাতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া সারা বছরে একমাত্র শবে কদর ব্যতীত এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মাহাত্ম মণ্ডিত রাত আর দ্বিতীয়টি নেই। এ মাহাত্ম ও গুরুত্বের কারণেই মহান আল্লাহ পাক এ রাতটিকে অফুরন্ত ফজিলত দান করেছেন। যেরকম জুমআর রাতের ইবাদতের উসিলায় সপ্তাহের গোনাহ্ মাফ হয় এবং শবে বরাতে ইবাদত করলে সারা জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
এ জন্য শবে বরাতকে গোনাহ মাফের রাতও বলা হয়। শবে বরাত সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস তুলে ধরা হল-
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
হাদিস-১
ইমাম মুনযেরী (রহ:) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, "যে ব্যক্তি দু' ঈদের দুই রা'ত এবং অর্ধ শাবানের রাত জেগে ইবাদাত করবে, তার অন্তর কিয়ামতের দিন মরবেনা যে দিন অন্তরসমূহের মৃত্যু হবে।"
হাদিস-২
শবে বরাত রাতকে শাফাআতের রাতও বলা হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, "নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উন্মতের জন্য তেরই শাবানের রাতে সুপারিশ করেছিলেন, তাতে এক তৃতীয়াংশ কবুল হয়েছিল। আতঃপর চৌদ্দই শাবানের রাতে সুপারিশ করেছেন, তাতে কবুল হয়েছে আরেক তৃতীয়াংশ, আতঃপর পনেরই শাবানের রাতের সুপারিশে অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ কবুল হয়ে তা পূর্ণতা লাভ করে।"
হাদিস-৩
শবে বরাতের এ রাতকে মাগফেরাতের রাতও বলা হয়। ইমাম আহমদ (রহ:) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: "আল্লাহ তা'য়ালা অর্থ শাবানের রাতে বান্দদের প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি করেন এবং দু' শ্রেণীর লোক ব্যতীত সকলের মাগফিরাত করে দেন। এ দু' শ্রেণী হল, মুশরিক ও হিংসুক।"
শবে বরাতের রাতের সন্ধ্যায় গোসল করা মুস্তাহাব। যদি কেউ এ রাতে গোসল করে, তবে শরীরের ছিটকানো প্রত্যেক পানির ফোঁটার পরিবর্তে তার আমলনামায় মহান আল্লাহ পাক সাতাশ রাকাত নফল নামাযের সওয়াব দান করেন।
হাদিস-৪
নবী করীম (সা:) এক হাদীসে বলেছেন:
طُوبَى لِمَنْ يَعْمَلْ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ
অর্থ: সেই ব্যক্তির জন্য পরম সৌভাগ্য এবং খুশির কথা, যে শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে ইবাদাতে লিপ্ত থাকে।
হাদিস-৫
হযরত আবু বকর (রা:) বলেছেন যে, "নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, হে মুমিনগণ! তোমরা শাবান মাসের পনের তারিখ রাত জেগে ইবাদাত বন্দেগী কর। কেননা ঐ রাতটি অতিশয় বরকতময় এবং ফযীলতপূর্ণ।" এ রাতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলে থাকেন, হে বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব।
এ সম্পর্কে নবী করীম (সা:) বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ يَا أَرْحَمُ عَصَاهُ أُمَّنِي فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وو بَعْدَ شُعُورِ أَنْعَامِ أَنْعَامِ بَنِي كَلْبٍ وَ بَنِي رَبِيعِ وَمُضَرًا .
অর্থ: "নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক এ রাতে বনী কালব, বনী রবী এবং বনী মুদার গোত্রের সমগ্র ভেড়া বকরীর পশমের সংখ্যার পরিমাণ আমার গুনাহগার উম্মতকে ক্ষমা করে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, আরবের এ তিনটি গোত্রের প্রত্যেক গোত্রে তখন কম বেশি তিন হাজার হতে বিশ হাজার করে ভেড়া ও বকরী ছিল।
হাদিস-৬
অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "জিব্রাইল ফেরেশতা এসে আমাকে বলে গেলেন যে, আপনার উম্মতগণকে জানিয়ে দিন যে, তারা যদি শবে বরাতে ইবাদাত করে, তবে তারা যেন শবে কদরে ইবাদাত করল।" এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শবে বরাতের ইবাদাত শবে কদরের ইবাদাতের মতই মূল্যবান।
হাদিস-৭
আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "এ রাতে যারা ইবাদতে মগ্ন থাকে তাদের প্রতি মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হয়। তাদের সগীরা কবীরা গোনাহ সমূহ মহান আল্লাহ পাক ক্ষমা করে থাকেন।"
হাদিস-৮
অপর এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "জিব্রাইল ফেরেশতা এসে আমাকে বলে গেলেন যে, হে আল্লাহর নবী! আপনি উঠে নামায পড়ুন এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। কারণ এ রাতে মহান আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার জন্য একশত রহমতের দরজা খুলে দেন। অতএব আপনি আপনার গুনাহগার উম্মতদের অপরাধ ক্ষমা করে নিন। অবশ্য মুশরিক, যাদুকর, গণক, কৃপণ, সুদখোর, শরাবপায়ী ও ব্যভিচারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না। কারণ তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই শাস্তি প্রদান করবেন।"
হাদিস-৯
অন্য এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: "শাবান মাসের শবে বরাতের রাতে যে ব্যক্তি একশত রাকাত নফল নামায আদায় করবে, তার জীবনের যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তার জন্য দোজখ হারাম হয়ে যাবে।"
হাদিস-১০
অন্য এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: " শবে বরাতের রাতকে যে জীবিত রাখে অর্থাৎ ইবাদত বন্দেগী করে, মহান আল্লাহ পাক তাকেও জীবিত রাখবেন। অর্থাৎ তার আমল নামায় মৃত্যুর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত সাওয়াব লিখা হবে।"
শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব শেষ কথাঃ
আশা করছি আপনি শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস গুলো পড়েছেন। এরকম ইসলামিক আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না এবং আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।