মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনাঃআসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা
তোমরা যারা মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা খুঁজছিলে কিন্তু ভালো কোন রচনা খুজে পাচ্ছিলে না। তাদের জন্য সহজ এবং গুছানো ভাবে আমরা মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা নিয়ে এসেছি তাছাড়া তোমার এই রচনাটি যেসব জায়গায় ব্যবহার করতে পারবে-মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা ssc,মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট

  • মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
  • মাদকাসক্তির পরিণাম
  • ড্রাগের নেশা সর্বনাশ
  • আধুনিক জীবনে ড্রাগের প্রভাব

মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ভূমিকা

মাদক বা ড্রাগের নেশা মানবজীবনে এক সর্বনাশা অভিশাপ। এটি একটি মরণনেশা। এ নেশা লাখ লাখ কিশেরু কিশোরী, তরুণ-তরুণীকে ঠেলে দিচ্ছে অকালমৃত্যুর দিকে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের বিরাট অংশ আজ এই সর্বনাশা ছায়ে। নেশার শিকার। যে তরুণ সমাজের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের, প্রতিবাদের, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের- আজ তার ড্রাগের নেশায় নিঃষ হওয়ার পথে। আধুনিক সভ্যতার বিষময় পরিণাম এই ড্রাগ।

সর্বনাশা নেশার উৎস

আদিকাল থেকেই মদ, গাঁজা, আফিম, ভাং, চরস, তামাক ইত্যাদি নেশার কথা মানুষের অজানা নয়। কিন্তু প্রাচীনকালে তা ছিল সীমিত পর্যায়ে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বেদনানাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত মাদক 'ড্রাগ' নামে পরিচিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেশার উপকরণ হিসেবে ড্রাগের ব্যবহার বেড়ে যায়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, ব্রাজিল প্রভৃতি অঞ্চলে মাদক তৈরির বিশাল চক্র গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে বেদনানাশক ড্রাগ পাশ্চাত্যের ধনাঢ্য সমাজে নেশার উপকরণ হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে ড্রাগ সৃষ্টি করেছে মারাত্মক সমস্যা- এই সমস্যা কোনো বিশেষ অঞ্চলের নয়, এই সমস্যা সমগ্র বিশ্বের।

ড্রাগ সমস্যার রূপ ও রহস্য

ড্রাগ সমস্যার রূপ ও রহস্য গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর। আধুনিক সভ্যতায় ড্রাগ আছে নানা ধরনের। যেমন: হেরোইন, এল.এস.ডি, প্রভৃতি। হেরোইনের উৎস হলো আফিম। পোস্তনির্যাস থেকে তৈরি করা হয় কাঁচা আফিম এবং তা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় হেরোইন তৈরি করা হয়। সাদা ও বাদামি- এই দুই রঙের হেরোইন পাওয়া যায়। নানা প্রক্রিয়ায় শরীরের মধ্যে হেরোইন নেবার ব্যবস্থা আছে। শরীরের রক্তে ঢুকে তীব্র নেশায় আসক্ত হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না- মুক্তি পাওয়া যায় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এল.এস.ডি. প্রভৃতি নেশা প্রায় একই ধরনের। অনেক সময় ইনজেকশন দিয়েও এ ড্রাগ নেওয়া হয়। সিগারেটের মধ্যে কিংবা অন্যভাবেও ড্রাগ নেওয়া হয়। ড্রাগ গ্রহণের নানা পদ্ধতির মধ্যে নাকে শোঁকার পদ্ধতিও একটি। বিভিন্ন রকম ড্রাগের মধ্যে হেরোইন আজ সব নেশাকে ছাড়িয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক চক্র

আন্তর্জাতিক চক্র কোটি কোটি ডলার খরচ করে আধুনিকতম ল্যাবরেটরিতে দক্ষ কেমিস্টের সাহায্যে তৈর করছে এই মাদকদ্রব্যগুলো। আফগানিস্তানে ব্যাপকভাবে গাঁজার চাষ হচ্ছে। পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তানে মূল ঘাঁটি এই আন্তর্জাতিক ড্রাগচক্রের। যার পোশাকি নাম Golden Triangle, কুয়েত, পেশোয়ার সৈনামাবাদ প্রভৃতি স্থানে তৈরি হয়েছে ড্রাগ তৈরির শতাধিক গবেষণাগার। ড্রাগ তৈরির পর সেগুলো চালান হচ্ছে প্রধানত ভারত ও এশিয়ার অনুন্নত দরিদ্র দেশগুলোতে। জলপথ, স্থলপথ ও আকাশপথে প্রতিদিন কোটি কোটি ডলার মূল্যের ড্রাগ চালান হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক চক্রের জাল এমনভাবে ছড়ানো যে পুলিশ ও কাস্টমস এদের বিশেষ কিছুই করতে পারে না। সারা বিশ্বে একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক কাজ করে চলেছে।

ড্রাগের নেশা ছড়ানোর কৌশল

আগের দিনে মানুষ নেশা করত দুঃখ-যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্যে কিংবা নিজের আভিজাত্য বজায় রাখতে। কিন্তু এখন ড্রাগের নেশা ধরানো হয়। আন্তর্জাতিক ড্রাগচক্রের এজেন্টরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে। এরা মিষ্টি পাতার মোড়কে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেয় ড্রাগের পুরিয়া, কখনো চাটনি বা আচারের মধ্যে। একবার খেলে রোজ খেতে হবে এবং নেশা ধরলে তা কেনার জন্যে চুরি-ডাকাতি করতে বাধ্য হবে। এভাবে বিভিন্ন দেশের গ্রামে- গঞ্জে ড্রাগের সর্বনাশা নেশা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা কৌশলে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।

মাদকাসক্তির পরিণাম

নিছক কৌতূহলবশত যদি কেউ একবার মাদক সেবন করে, তবে এই নেশা অচিরেই সিন্দবাদের দৈত্যের মতো তার ঘাড়ে চেপে বসে। আর যদি একবার চেপে বসতে পারে তবে তাকে তাড়ানো অত সহজ নয়। মাদকাসক্তির ফলে তার আচার-আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তার মধ্যে কোনো সৌজন্যবোধ থাকে না, আর চেহারা হারায় লাবণ্য। মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছাত্র হলে তার বইপত্র হারিয়ে ফেলা, লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাওয়া, স্কুল পালানো, মাদকের অর্থ জোগাতে চুরি করা ইত্যাদি নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। সময়মতো নেশার জন্যে প্রয়োজনীয় মাদক না পেলে আসক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ঘটনার জন্ম দেয়। লোকের সঙ্গে এরা অশোভন আচরণ করে। 

মাদকের নেশার প্রভাবে রোগীর দৈহিক প্রতিক্রিয়াও নেতিবাচক হয়। নিস্তেজ হতে থাকে তার মননশক্তি। ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে তার শারীরিক গঠন। ক্রমে স্নায়ু শিথিল ও অসাড় হয়ে আসে। এভাবে প্রতিনিয়ত জীবনীশক্তি হ্রাস পায় এবং মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।

প্রতিকারের উপায়

ড্রাগের ভয়াবহ নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে কিশোর-তরুণ যুবকসহ দেশের অসংখ্য মানুষ। স্কুল-কলেজের কত যে ছেলেমেয়ে ড্রাগের নেশায় সর্বনাশের অতলে তলিয়ে গেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। অবস্থা বিবেচনা করে সমাজকর্মীরা আজ উদ্বিগ্ন। বিশ্বের নানা দেশে বিভিন্ন সংগঠন মাদকবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে। বাংলাদেশেও মাদকবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের প্রতিকার এবং নতুন করে যাতে আর মাদকাসক্ত না হয় সেজন্যে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যেমন:

১. মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে ভেষজ ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. সুস্থ বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করে নেশার হাতছানি থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে।

৩. সমস্ত গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে মাদকাসক্তির মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে হবে।

৪. মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫.বেকার যুবকদের জন্যে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

৬. মাদকাসক্তির ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার উপসংহার

মাদক বা ড্রাগ আজ কীভাবে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে তা সকলেই জানে। মাদকাসক্তির মতো সর্বনাশা পার করালগ্রাসে পড়ে তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ যেভাবে জীবনশক্তি হারিয়ে ফেলতে বসেছে তাতে সমাজ আজ শঙ্কিত। চক্র খতম না হলে ড্রাগের নেশা সমাজকে ধ্বংস করে দেবে। এ বিষয়ে এখনই সরকার ও সমাজের প্রত্যেকের সচেতন হওয়া।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url