বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৫০০+ শব্দ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৫০০+ শব্দঃ আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো। এই রচনাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৫ম,ষষ্ঠ শ্রেণি এবং ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা লিখতে পারবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ভূমিকা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির আবহমানকালের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একটি মাইলফলক। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস। অজস্র মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের জাতীয় জীবনে তাই মুক্তিযুদ্ধ একটি অহংকার এবং গৌরবময় এক মহান বিজয়গাথা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের মাধ্যমে ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি প্রদেশ হিসেবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কেন্দ্রীয় শাসনক্ষমতা থাকে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের নেতাদের হাতে। তখন থেকেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয় পূর্ববাংলার জনগণ। তারা প্রথম আঘাত হানে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও মাতৃভাষার ওপর। আস্তে আস্তে পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের স্বরূপ স্পষ্ট হতে থাকে পূর্ববাংলার জনগণের সামনে।
পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের অল্পকালের মধ্যেই শতকরা ৫৬ জন মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে শতকরা ৭ ভাগ লোকের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ববাংলার জনগণ। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে জীবন দিয়ে। পূর্ববাংলার প্রতিবাদী জনতা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার শপথ নেয়। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলক সামরিক শাসন জারি করে। শুরু হয় চরম দমন-পীড়ন নীতি। ফলে পূর্ববাংলার জনগণের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র অসন্তোষ।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের নামে শোষণের কারণে স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত হয় পূর্ববাংলার মানুষ। এ প্রেক্ষাপটে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
এই মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে সেনানিবাসে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে জনতার বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালের ৭ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী গণ-আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলন ভয়ঙ্কর গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নিয়ে রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় দেখে পাকিস্তান সরকার আতঙ্কিত হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে তালবাহানা ও নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে দাঁড়িয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি বস্তুকণ্ঠে ঘোষণা দেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সন্তাম।"
অসহযোগ উলেশন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে পাকিস্তান সরকার নির্মম হয়ে ওঠে। ২৫শে মার্চ রাতে তদানীন্তন সামরিক একনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেয় নিরীহ বাঙালি জনগণের ওপর। রাতের আঁধারে সরকার নৃশংসতম গামাতার জনন ঘটায়। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতের শেষে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বক্তাবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনরে ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বক্তাবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের মধ্যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের রাজত্ব কায়েম করে। বাঙালি পুলিশ ও সেনারা স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রায় ১ কোটি শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য। ৫। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতে। প্রতি হয় অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাঁর অবর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি হন কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী। বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধকে তিনি বেগবান করে তোলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে। তারা যুদ্ধকৌশল, অস্ত্রচালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহার সম্পর্কে দেশের ভেতরে এবং প্রতিবেশী ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এভাবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এদেশের মুষ্টিমেয় ব্যক্তি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে।। পাকিস্তানি বাহিনী ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ কিছু দেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিলেও ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানায়। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। মুক্তিবাহিনী কমে শক্তি অর্জন করে। তাদের চোরা-গোপ্তা গেরিলা তৎপরতা ও দুঃসাহসিক লড়াইয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভারত মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করে।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। সারাদেশে জনতার দৃপ্ত উল্লাসের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা উপসংহার
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাস ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার পর ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো দেশকে গড়ে তোলা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলা।