অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট-HSC,SSC

অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্টঃ আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো। এই রচনাটি অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট HSC,SSC শ্রেণির শিক্ষার্থীরা লিখতে পারবে।
অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট

অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট ভুমিকা

একনিষ্ঠ চেষ্টার নাম অধ্যবসায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করার গুণটিই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে সফল হওয়া যায় না।

অধ্যবসায় কী

অধ্যবসায় হচ্ছে মানুষের মহৎ চারিত্রিক গুণ। কোনো কাজের সফলতা লাভ করার জন্যে মানুষ বারবার যে চেষ্টা করে তার নাম অধ্যবসায়। কোনো কাজে প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হওয়া যাবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। একবারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে কাজ ত্যাগ করলে জীবনে কোনো দিনই প্রতিষ্ঠা আসে না। কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষের (১৮৪৩-১৯১০) ভাষায়-

অধ্যবসায় রচনা উক্তি

  • পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,

  • কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার।

  • পাঁচজনে পারে যাহা,

  • তুমিও পারিবে তাহা,

  • পার কি না পার কর পরখ তাহার,

  • একবারে না পারিলে দেখ শতবার।

এই হচ্ছে অধ্যবসায়ের মূল কথা। সেসঙ্গে উদ্যম, উদ্যোগ, অবিরাম কর্মপ্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায়কে সফল করে তোলে। মানবজীবনে অনেক বেশি অধ্যবসায় প্রয়োজন।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

জীবনের চলার পথ সহজ করার জন্যে অধ্যবসায় প্রয়োজন। মানবসভ্যতার বিকাশেরও অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। আদিম লোকেরা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বৈরীশক্তিকে মোকাবিলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে। অনাবাদি জমি আবাদযোগ্য করে তোলা, উষর মরুভূমিকে মরূদ্যানে রূপ দেওয়া- অধ্যবসায়ের ফল। আদিম গুহাচারী বন্য লোকেরা মহাশু নিয়ে উদ্ভট চিন্তা করত, আজ সেই মহাশূন্যেই পারি জমিয়েছে মানুষ। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন; চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আজ মানুষ অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। 

বাংলাদেশের প্রাণী ও জিন গবেষকরা দু'বছর গবেষণার মাধ্যমে মহিষে বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিন বিন্যাস উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের মহিষ ও অধিক পরিমাণ দুধ উৎপাদন করা সম্ভব। এ সাফল্য অধ্যবসায়ের দান। মানবসত্যতার বিকাশের ইতিহাস অধ্যবসায়ের মহৎ গুণের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান বিশ্বে মানবজীবন সুখকর করার উদ্যোগের পেছনে আছে বহু যুগ-যুগান্তরের অধ্যবসায়। তাই বলা যায়, মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠা এবং যাবতীয় উন্নতি ও সৌন্দর্য সৃষ্টির পেছনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়

জীবনের সঙ্গে অধ্যবসায়ের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব আরো অনেক বেশি। সকল মানুষের ক্ষমতা সমান নয়, কিন্তু সবাই উন্নত জীবনের সম্মান লাভ করতে চায়। এর জন্যে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ হয় না- হতে পারে না। জীবনে সহজে কোনো কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ কারো জন্যে সুখের উপকরণ তৈরি করে রাখে না। মানুষকে তার প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজের যোগ্যতায় অর্জন করে নিতে হয়। তাই কোনো বাধায় পিছপা না হয়ে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সুখ-শান্তি অর্জন করে নিতে হবে।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অনেক। কোনো জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে জাতির প্রত্যেক সদস্যকে আন্তরিকভাবে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। একনিষ্ঠভাবে সবাই জাতীয় স্বার্থ সাধনের জন্যে সর্বশক্তি নিয়ে আত্মনিয়োগ করলে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠা অর্জন সম্ভব। জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিজীবনে তার অনুশীলন তয়োজন। কারণ ব্যর্থতা কারো কাম্য নয়। প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদাভাবে সফল হলেই জাতীয় জীবন সমৃদ্ধ হয়। কাজেই জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দেশে অধ্যবসায়ী লোকসংখ্যা যত বেশি হবে জাতীয় জীবন হবে ততই সুখকর।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় একটি মহৎ গুণ। ছাত্রজীবনই উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে ব্যর্থ হলে মানবজীবনের পুরোটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে গভীর সংযোগ। অনেকের ধারণা, প্রতিভার জোরেই ছাত্ররা ভালো ফল করে। কথাটা আংশিক সত্য হতে পারে, কিন্তু প্রতিভার সঙ্গে অধ্যবসায় না থাকলে কোনো মতেই ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। অনেক সময় দেখা গেছে, অধ্যবসায়ের গুণে অল্প মেধাবী শিক্ষার্থীও উত্তম ফল লাভে সমর্থ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে কর্মজীবনে। কাজেই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অনেক।

অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত

জগতে যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন, অতুলনীয় শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মানুষ হয়েছেন, দৈহিক মৃত্যুর পর হয়েছেন অমর, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের অদ্বিতীয় কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে। কাজী নজরুল ইসলামের বেলায়ও একই কথা। গ্রিক মহাকবি হোমার ছিলেন অন্ধ, কিন্তু তাঁর রচিত মহাকাব্য পৃথিবীর সেরা পাঁচটি মহাকাব্যের অন্তর্ভুক্ত। এটি অধ্যবসায়ের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসী ত্রিশ বছরের সাধনায় ঘাট হাজার শ্লোক সংবলিত মহাকাব্য 'শাহনামা' রচনা করেন। স্কটল্যান্ডের রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সপ্তমবারের মাথায় যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন। এসবই একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের ফল।

বিজ্ঞানে অধ্যবসায়

পৃথিবীর সমস্ত ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিচিত। এর মধ্যে বিজ্ঞান অন্যতম। প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেছনে লক্ষ্য করলে অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত দেখতে পাবো। আমরা বর্তমানে যে সকল বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি এগুলো আবিষ্কার এতটাও সহজ ছিল না। বৈজ্ঞানিকদের আত্মবিশ্বাস, প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের ফলেই আজ পুরো বিশ্বে এত উন্নত প্রযুক্তি। বিজ্ঞান থেকে আমরা অধ্যবসায়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।

অধ্যবসায়হীন মানুষের পরিণাম

মানব জীবনের সফলতা পাওয়া এতটা সহজ নয়। অনেক ব্যক্তি কোন কাজের শেষ পর্যন্ত গিয়েও অধ্যবসায়ের অভাবে তাতে সফল হতে পারেন না। একজন মানুষের জীবনে যদি অধ্যবসায় না থাকে তাহলে সে কোন কিছুতেই সফল হতে পারবে না। কেননা প্রতিটি সফলতার পেছনে থাকে দৃঢ় প্রচেষ্টা, ধৈর্য এবং পরিশ্রম। অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক মানুষ ব্যর্থ হন। অ্যাপেল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্ট্রিভ জবস বলেছেন-

অধ্যবসায় রচনা উক্তি

"রাতারাতি সাফল্য বলতে কিছুই নেই। মনোযোগ দিলে দেখবে সব সাফল্যই অনেক সময় নিয়ে আসে।"

অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট উপসংহার

জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। অধ্যবসায়ের যে পথ ধরে বর্তমান বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সে পথেই রয়েছে ভবিষ্যতের উন্নততর বিশ্বগঠনের চাবিকাঠি। তাই ছাত্রজীবন থেকেই অধ্যবসায়কে জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম সাথী করে নিতে হবে। অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়েই জীবন হয়ে উঠবে সফল ও সার্থক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url