স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ১০

স্বদেশ প্রেম রচনাঃ আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ১০ সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো। এই রচনাটি স্বদেশ প্রেম রচনা HSC,SSC শ্রেণির শিক্ষার্থীরা লিখতে পারবে।
স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশপ্রেম বা দেশ প্রেম

তোমাদের স্কুলের কোন প্রতিযোগিতায় যদি স্বদেশ প্রেম রচনা আসে তাহলে এটি লিখতে পারো। কারণ রচনাটি খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। 

স্বদেশ প্রেম রচনা ভূমিকা

স্বদেশ বা জন্মভূমির সাথে থাকে মানুষের মনের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। এ বন্ধন জীবনের সাথে, আত্মার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে জন্মভূমির প্রতি মানুষের গভীর মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। জন্ম থেকে বড় হওয়ার ধাপে ধাপে নিজের অজান্তেই ষদেশের জন্যে মানুষের মনে জন্ম নেয় নিবিড় ভালোবাসা। এই অনন্য ভালোবাসাই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেম কী

স্বদেশ মানে জন্মভূমি আর প্রেম মানে ভালোবাসা। স্বদেশপ্রেম মানে জন্মভূমির জন্যে মানুষের এক ধরনের অনুরাগময় আবেগানুভূতি। স্বদেশপ্রেম বলতে বোঝায় নিজের জন্মভূমিকে ভালোবাসা। জন্মসূত্রে জন্মভূমির সাথেই গড়ে ওঠে মানুষের নাড়ির বন্ধন। জন্মভূমির জন্যে তার মনে জন্ম নেয় নিবিড় ভালোবাসা। এ অনন্য ভালোবাসাই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। আমাদের জন্মভূমিকে আমরা সবাই ভালোবাসি।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। সন্তান যেমন সহজাতভাবে অনুরক্ত হয় তার মাতার প্রতি, মানবশিশুও তেমনি নিবিড় প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয় তার জন্মভূমির সঙ্গে। জন্মভূমির মাটি, আলো-বাতাস, অন্ন-জলের প্রতি মানুষের মমত্ব অপরিসীম। জন্মভূমির ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রতি থাকে তার এক ধরনের আবেগময় অনুরাগ। জন্মভূমির ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন। জন্মভূমির প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি এই অনুরাগ ও বন্ধনের নাম মদেশপ্রেম। 

স্বদেশ হলো আসলে জননীর মতো। মা যেমন স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন, স্বদেশও তেমনি তার আলো-বাতাস সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই মাকে আমরা যেমন ভালোবাসি, স্বদেশকেও তেমনই ভালোবাসতে হবে। মদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে উঠবে আমাদের জীবন।

স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ

মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকে দেশকে ঘিরে মানবমনে অনুরাগের সূচনা হয়েছে। বিদেশি শত্রুর হাত থেকে জন্মভূমিকে রক্ষা, দেশের সমৃদ্ধিচিন্তা, দেশবাসীর উন্নতির চিন্তা প্রাচীনকালেও দেখা যায়। স্বদেশপ্রেম সদা বহমান থাকে মানুষের অন্তরে। বিশেষ সময়ে, বিশেষ অবস্থার পরিপেক্ষিতে তা আবেগ-উদ্বেল হয়ে ওঠে। আমাদের দেশেও শিল্পে-সাহিত্যে-সংগীতে- ভাস্কর্যে স্বদেশপ্রেমের প্রদীপ্ত প্রকাশ দেখা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকান্তের কবিতা এবং দেশাত্মবোধক গানে স্বদেশপ্রেমের আবেগময় প্রকাশ উজ্জ্বল হয়ে আছে। 

১৯৩০ সালে সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যুবসমাজের বিদ্রোহ স্বদেশপ্রেমেরই বলিষ্ঠ প্রকাশ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ঘটেছে। স্বদেশপ্রেম জাতির অগ্রগতির লক্ষ্যে গভীর প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একপ্রাণ হয়ে মহৎ লক্ষ্য সাধনে ব্রতী করে সবাইকে। আবার লেখকের রচনার বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ স্বদেশপ্রেমের নতুন অঙ্গীকার গ্রহণ করেন।

স্বদেশপ্রেমের জাগরণ

শান্তির সময় দেশবাসীর হৃদয়ে সহজে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটে না। সেখানে প্রতিদিনের দিনযাপনের আর প্রাণধারণের গ্লানি জমা হয়ে ওঠে। দেশমাতৃকার জাগ্রত রূপ আমরা দেখতে পাই না। এই জাগ্রত রূপ আমরা অনুভব করি দেশের সামগ্রিক দুঃখের মধ্যে। এই দুঃখ সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় যখন বাইরের শত্রুরা দেশ আক্রমণ করে। দেশের শান্তির সময় আমাদের মধ্যে যতই দলাদলি থাকুক না কেন, তখন দেশরক্ষার জন্যে আমরা সকলেই 'একজাতি একপ্রাণ একতার' কথা ভেবে ঐক্যবন্ধ হই।

তখন সকলের প্রাণে একটি মন্ত্র জাগরিত হয়- আমার দেশ, আমার মা। কেবল স্বাধীনতা অর্জন কিংবা স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামেই দেশপ্রেমের জাগরণ সীমাবদ্ধ থাকে না, দেশকে সমৃদ্ধিশালী করাতেও স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি ঘটে। দেশের কল্যাণ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে, বিশ্বসভ্যতায় অবদান রেখে বিশ্বের দরবারে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করা যায়।

স্বদেশপ্রেমের প্রভাব

স্বদেশপ্রেম পবিত্র এবং দেশ ও জাতির জন্যে গৌরবের। মানবচরিত্রের গুণাবলি বিকাশে স্বদেশপ্রেমের প্রভাব অপরিসীম। স্বদেশপ্রেমের মহৎ চেতনায় মানুষের মনোরাজ্য সদর্থক গুণে সমৃদ্ধ হয়, তার মন থেকে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা দূর হয়। স্বদেশপ্রেমে জাতির জন্যে কল্যাণচিন্তা জাগ্রত হয়, ফলে জনসেবার অনুভূতি জন্ম নেয়। নির্মল স্বদেশপ্রেম মানুষের মনকে উদয় করে, আত্মসুখ বিসর্জনের প্রেরণা দেয় এবং পরের কারণে স্বার্থ বলি দেওয়ার মানসিক শক্তি অর্জিত হয়। স্বদেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা যুগে যুগে জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার জন্যে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা রেখে গেছেন স্বদেশপ্রেমের শ্রেষ্ঠ পরিচয়।

স্বদেশপ্রেমিকের ভূমিকা

দেশপ্রেমের বহু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বাঙালি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তাঁদের মধ্যে নেতাজি সুভাষ বসু, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ আমাদের অম্লান প্রেরণা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে যাঁরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ শেখ, মুন্সী আবদুর রউফ, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, হামিদুর রহমান, মতিউর রহমান, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল শ্রেষ্ঠ। তাঁরা আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ এবং অতুলনীয় তাঁদের স্বদেশপ্রেম। 

বিশ্বের দেশে দেশে বহু রাষ্ট্রনায়ক দেশ ও জাতিকে নবচেতনায় উজ্জীবিত করে গেছেন। গ্যারিবড্ডি, ওয়াশিংটন, লেনিন, মাও সেতুং, হোচি মিন, চাঁদ সুলতানা, মোস্তফা কামাল পাশা, শিবাজী, মহাত্মা গান্ধী, জোয়ান অব আর্ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেইরকম দেশপ্রেমিক।

স্বদেশ প্রেম রচনা উপসংহার

স্বদেশপ্রেম এক মহৎ প্রেরণার প্রতীক। যথার্থ দেশপ্রেমিক দেশচিন্তার সঙ্গে সর্বমানবিক কল্যাণ চিন্তাতেও তৎপর। আমাদেরও স্বদেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে সাধ্যমতো অবদান রাখার ক্ষেত্রে তৎপর হতে হবে। স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরও অংশ। স্বদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিশ্বকেও ভালোবাসা যায়। এর ভেতর দিয়েই গড়ে উঠতে পারে বিশ্বপ্রেমের সেতুবন্ধন।

স্বদেশ প্রেম রচনা-শেষ কথাঃ

আশা করছি স্বদেশ প্রেম রচনা রচনাটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে তোমাদের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলো না। আর কোন রচনা চাও কমেন্ট করে জানাতে পারো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url