সময়ের মুল্য রচনা। সময়ানুবর্তিতা রচনা SSC HSC

সময়ের মুল্য/সময়ানুবর্তিতা রচনাঃ আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য সময়ের মুল্য রচনা,সময়ানুবর্তিতা রচনা  সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।
সময়ের মুল্য রচনা

সময়ের মুল্য/সময়ানুবর্তিতা রচনা

তোমাদের স্কুলের কোন প্রতিযোগিতায় যদি স্বদেশ প্রেম রচনা আসে তাহলে এটি লিখতে পারো। কারণ রচনাটি খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। 

সময়ের মুল্য রচনা ভূমিকা

জীবন ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবীতে মানুষের অবস্থানের সময় খুবই কম। কিন্তু জীবনে কর্ম ও কর্তব্যের শেষ নেই। এজনে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কার্যকর ও সফল করে তোলার হিসাব মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়। সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে বহু কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সংসার থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করতে হয়। জীবন থেকে যে সময় চলে যায় তা আর কখনোই ফিরে আসে না। তাই জীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম।

সময়ের মূল্য

সময় এক অমূল্য সম্পদ। একে চোখে দেখা যায় না। অবিরাম বয়ে চলাই তার ধর্ম। চোখের সামনে দিয়েই সে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে, কিন্তু একে ধরে রাখার সুযোগ নেই। ধন-সম্পদ হারিয়ে গেলে চেষ্টা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তা ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন থেকে প্রতি মুহূর্তে যে সময় চলে যায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। সময় কারো জন্যে অপেক্ষায় থাকে না। চলছে তো চলছেই, সৃষ্টিকর্তা কোনোকিছুই মানুষের ওপর চাপিয়ে দেননি। অর্থাৎ কর্মসম্পাদনের জন্যে প্রয়োজনীয় সময় তিনি ঠিকই দিয়েছেন, কিন্তু আমরা তার সদ্ব্যবহার করি না। 

এতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সময়ের মূল্য সম্পর্কে আমরা। সচেতন নই। আমরা যা কিছুই অপচয় করি তার মধ্যে এক নম্বরে আছে সময়। লেখাপড়ার বেলায় হোক, অর্থ উপার্জনেই হোক বা অন্য যেকোনো কাজেই হোক, সময়ের মূল্য যারা বোঝে না, তাদের জীবনে কোনো সাফল্য আসে না। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে কর্তব্য অনুযায়ী সময়কে ভাগ করে নিলে সফলতা হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেয়।

সময়ের সদ্ব্যবহার

মানুষের জীবনে সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে একদিন তার জীবন-প্রদীপ নির্বাপিত হবেই। পৃথিবীতে দেহের বিনাশ ঠেকানোর উপায় নেই। তাই বহমান সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের-সদ্ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। সময়ের কাজ সময়ে না করলে ভোগান্তি বাড়ে। এ জন্যেই বলা হয়ে থাকে, 'সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়'। জীবনের প্রকৃত সুখ ও মহৎ কার্যাবলি এ কর্মের মধ্যেই নিহিত। তাই মানুষকে কর্মের ভেতর দিয়ে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হলে আমাদের জীবন থেকে আলস্য, বিলাসিতা এবং যাবতীয় অবাস্তব কল্পনা ত্যাগ করতে হবে। 

দার্শনিক রাসকিনের মতে, 'জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত শত কর্ম সম্ভাবনার আশায় স্পন্দমান- তার এক মুহূর্ত গত হলে সেই ক্ষণের নিরূপিত কর্ম আর হবে না। মনে রাখতে হবে, ঠাণ্ডা লোহার ওপর অসময়ের হাতুড়ির ঘা পড়লে কোনো লাভ নেই।' মূলত মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাসময়ে কাজে লাগিয়ে এ নম্বর ধরণীতে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে যাওয়াই মানবজীবনের সার্থকতা। প্রকৃতপক্ষে যে কাজটি করতে হবেই তা কখনো ফেলে রাখতে নেই। কোনো রকম হেলাফেলায় সময় নষ্ট করা উচিত নয়। অর্থাৎ সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে।

ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার

জীবন গঠনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছাত্রজীবন। সময়ের সদ্ব্যবহার ছাত্রজীবনের যাত্রাকে আলোকিত করে, সুন্দর জীবনের সন্ধান দেয়। সময়ের সদ্ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তাদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষীদের জীবনকথা পড়লে দেখা যায়, ছাত্রজীবনে তাঁরা সকলেই সময় সচেতন ছিলেন এবং সময়কে জীবনে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছাত্রজীবনে নিত্যদিনের স্কুলপাঠের পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, সংস্কৃত, ইংরেজি, তামিল, হিব্রু, ল্যাটিনসহ মোট ১২টি ভাষা শেখায় মনোযোগী ছিলেন।

সময়ের অপব্যবহারের পরিণাম

যে সময়ে যে কাজ করা প্রয়োজন সে সময়ে তা না করলে পরিণামে সারাজীবন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে-এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ওয়াটার লুর যুদ্ধে সম্রাট নেপোলিয়নের জনৈক সেনাপতি নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট পর সেনাদের নিয়ে হাজির হওয়ার ফলে সে যুদ্ধে নেপোলিয়নকে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। অনেক প্রতিভাবান ও পেশীশক্তি সম্পন্ন যুবককেও কেবল সময়ের প্রতি উদাসীনতার কারণে জীবনে বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে।

সময়ের গুরুত্ব

সময় কারো অপেক্ষায় থাকে না। অনন্তকালের মধ্যে এই ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনের পরিমাণ মহাসমুদ্রের বুকে বুদবুদের মতোই সামান্য। অথচ মানুষের সামনে বিশাল ও অফুরন্ত শিক্ষাভাণ্ডার, অপরিমেয় কর্তব্য এবং ক্রমবর্ধমান কর্মজগৎ পড়ে আছে। মানুষ যদি সময়ের অপব্যবহার না করে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারে, তবে তার ক্ষণস্থায়ী জীবন জ্ঞান ও কর্মের মহিমায় অনন্তকাল ধরে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, তার অস্তিত্ব অবিনশ্বর ইতিহাসে পরিণত হবে। মৃত্যুর পরও সে মানুষের অন্তরে অমর হয়ে থাকবে। আর যারা আলস্য পরবশ হয়ে এই অমূল্য সময়কে হেলায় নষ্ট করে, মৃত্যুতেই তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। একজনের শতবর্ষব্যাপী কর্মহীন জীবনের চেয়ে অন্য একজনের মাত্র কয়েকটি বছরের কর্মোজ্জ্বল জীবন সাফল্যের গৌরবে দীপ্তিমান হয়ে ওঠে। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে শিখলে সময় শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হয়।

সময়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব

পৃথিবীর বহু বিখ্যাত মনীষীর জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি মুহূর্তকে তাঁরা মূল্য দিয়েছেন। প্লেটো, এরিস্টটল, আইনস্টাইন, আব্রাহাম লিংকন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তির জীবনী পাঠ করলে জানা যায়, জীবনে তাঁরা কীভাবে সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোরিয়া ও জাপান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আজ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সময়ের মুল্য রচনা-উপসংহার

পৃথিবীতে যাঁরা গৌরবের উচ্চশিখরে আরোহণ করে অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁরা কেউ সময়ের মূল্য সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন না। জীবনকে সফল করতে সময়ের কাজ সময়ে সুসম্পন্ন করতে হবে। নদীর স্রোতের মতো সময় বহমান। তাই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সময়কে অর্থবহ করে তুলতে হবে, কারণ জীবনে সময়ের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই।

সময়ের মুল্য রচনা-শেষ কথাঃ

আশা করছি সময়ের মুল্য রচনাটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে তোমাদের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলো না। আর কোন রচনা চাও কমেন্ট করে জানাতে পারো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url